বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

ব্রি ৮৮ জাতের নতুন ধান আগাম কাটতে পারায় কৃষকরা খুশি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত নতুন ধান ব্রি ৮৮ সবার আগে কাটতে পেরে কৃষকের মুখে আনন্দের হাসি ফুটেছে। সবচেয়ে শেষে রোপন করেও সবার আগে কেটে বাড়িতে নিয়ে আসতে পারায় এ ধানের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে অন্যান্য কৃষকরা। এই ধানের এর জীবনকাল ১৩৫-১৪০ দিন হওয়ায় আগাম বন্যা, শিলাবৃষ্টি ও বৈশাখী ঢলের আগেই কাটতে পারবে কৃষক।

বর্তমানে কৃষকরা স্বল্প জীবনকালের ধানের জাত ব্রি ২৮ চাষ করছে। বিগত ৮-১০ বছর থেকে এই জাতের ধান চিটায় আক্রান্ত হয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিল। ফলে স্বল্প জীবনকালের নতুন একটি ধানের জাতের বড়ই প্রয়োজন ছিল। ব্রি ৮৮ এই প্রয়োজন পুরোপুরি মিটাবে। ব্রি ৮৮ জাতের ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্রি ২৮ এর চেয়ে বেশী।

গুঙ্গিয়াজুরি হাওরে প্রতি বছর আগাম বন্যা কিংবা বৈশাখ ঢলে পাকা ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে চৈত্রের শেষ থেকেই কৃষকরা আশংকার মধ্যে দিনাতিপাত করে। কবে তাদের ফসল তলিয়ে যায়। এই নতুন জাতের ধান কৃষকদের এই আশংকা থেকে মুক্তি দিবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন।
এবছরই প্রথম ঘুঙ্গিয়াজুরী হাওরে এই জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা জানিয়েছেন ৮৮ জাতের ধান সবার সবশেষে রোপন করে সবার আগে কেটে নিয়ে আসা যায়। এবার ফলনও হয়েছে বাম্পার । স্বল্প জীবনকালের অন্যান্য জাতের ধানের চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘায় (৩০ শতক) ১৯ থেকে ২১ মন ধান ফলন হয়েছে।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামের কৃষক সলিম উল্ল্যাহ জানান, শুধুমাত্র আগাম বন্যা থেকে রক্ষা ও বৈশাখী ঢল থেকে ফসল বাচাতে এসেড হবিগঞ্জ এর কর্মকর্তার কথায় এ বছর ব্রি ৮৮ ধানের চাষ করেছিলাম। এ ধানের জাত অত্যন্ত ভাল ফলন হয়েছে। আগাম বন্যার আগেই ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন হাওরে এখনো পুরোপুরিভাবে ধান কাটা শুরু হয়নি. যে কারনে সস্তায় শ্রমিকও পাওয়া গেছে।

পাশ্ববর্তী সিকান্দরপুর গ্রামের অপর কৃষক আব্দুল হক জানান, আমি গুঙ্গিয়াজুরি হাওরে ব্রি ৮৮ জাতের ধান রোপন করেছিলাম এবার ফলন ভাল হয়েছে। প্রতি কের-এ ২০ থেকে ২২ মন ধান হয়েছে। তিনি বলেন সবার শেষে রোপন করে সবার আগে ধান কেটেছি এতে আনন্দ লাগছে।

এসেড হবিগঞ্জ এর চীফ অব প্রোগ্রাম জামিল মোস্তাক জানান, বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের সহায়তায় আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছি ব্রি ৮৮ জাতের ধান চাষ করার জন্য। এ ধান আগাম বন্যা থেকে কৃষকদের রক্ষা করবে। পাশাপাশি শিলাবৃষ্টি ও বৈশাখী ঢল থেকে বেচে যাবে।

এসেড হবিগঞ্জ এর প্রধান নির্বাহী জাফর ইকবাল চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর গুঙ্গিয়াজুরি হাওরে আগাম বন্যায় কৃষকের ধান নষ্ট হয়ে যায়। এই সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাথে পরামর্শ করি। তারা পরামর্শ দেন তাদের উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৮৮ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিলে আগামবন্যা থেকে রক্ষা পাবে। এ জাতের ধান চাষ করে এখানকার কৃষকরা অনেক লাভবান হয়েছে। তিনি বলেন আগামীতে আরো বেশি করে কৃষকদের মাঝে এ জাতের ধান ছড়িয়ে দিতে হবে।

বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট, হবিগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক জানান, বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট ১০০ ধনের জাতের ধান আবিস্কার করেছে। কৃষকরা যাতে করে অধিক ফলন পেতে পারে সেজন্য নতুন নতুন জাতের ধান তাদের সরবরাহ করা হয়। আমরা এসেড হবিগঞ্জ এর মাধ্যমে ব্রি ৮৮ জাতের ধান কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছি যাতে করে স্বল্প সময়ে ও কম খরচে অধিক ফলন পাওয়া যায়। তিনি আরো বলেন এ জাতের ধান বৈশাখী ঢল ও আগাম বন্যার পূর্বেই কৃষক ঘরে তুলতে পারবে। তাদের ফসল বন্যা ও বৈশাখী ঢল থেকে রক্ষার জন্য ৮৮ জাতের ধান চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com